
হায়রে জীবন
- 23 Aug 2025
- 44
রবিউল মিলটন
প্রতিদিনই সে কাগজ কুড়ায়। নাম তার রাজু। দেহের তুলনায় মাথাটা কিঞ্চিত বড়। চোখ দুটো বড় বড়।, গায়ে কিছু নেই। হাঁটু পর্যন্ত একটা হাফ প্যান্ট পরনে। বারবার সেটা খুলে যেতে চাইছে। আর বারবার সেটাকে টেনে কোমরে ধরে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। সূর্যটা তার সম্পূর্ণ তেজ ধারণ করে রয়েছে। সে তার সোনালি আগুনে পুড়িয়ে দিতে চাইছে পৃথিবীটাকে। অসহ্য লাগছে যেন সবকিছু। দুপুরবেলা, রাস্তাটায় জনমানুষের ভিড় নেই। রাস্তার পর রাস্তা ছেলেটি কাগজ কুড়োতে ব্যস্ত। সমস্ত দেহে ঘামের ঝরনা বইছে। ওর বড় বড় চোখ দুটো ভেতরে ঢুকে যেতে চাইছে। সেই সাত সকালবেলা পেটে কি জুটেছে তার কোন খবর নেই। একটু মনে করার চেষ্টা করতেই মনে পড়ে গেলো গতরাতে ফুটপাতের পাশে খিচুড়ি কিনে খেয়েছিল।
আর সারারাত পেটের ব্যথায় ঘুমুতে পারেনি। পাতলা পায়খানাও হয়েছে কয়েকবার। ভোরে উঠেই খিদের জ্বালা নিয়ে ছটফট করতে করতে নেমেছে রাস্তায় কাগজের খোঁজে। সারা শরীরে ক্লান্ত ভাব।
আর সারারাত পেটের ব্যথায় ঘুমুতে পারেনি। পাতলা পায়খানাও হয়েছে কয়েকবার। ভোরে উঠেই খিদের জ্বালা নিয়ে ছটফট করতে করতে নেমেছে রাস্তায় কাগজের খোঁজে। সারা শরীরে ক্লান্ত ভাব। মাথাটা খিদেয় ঝিমঝিম করছে। অগত্যা বস্তাটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে নেমে এসেছে রাস্তায়। কিছু একটা করা দরকার তাই করা। হঠাৎ গরমে অতিষ্ঠ হয়ে রাস্তার একটা গাছের ছায়ায় বসে পড়ে সে। আজ তেমন কুড়নো হয়নি কাগজ। সব জায়গাতেই প্রতিযোগিতা। মাঝে মাঝে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে প্রহারও পেতে হয়। অবশ্য সবই সয়ে গেছে।
পেটে দু – একটি দানা পানি পড়লে দু – চার ঘা পিঠে সয়। জন্মের বছরই বাপ মারা যায়। মা আবার বিয়ে করে। সৎ বাপটা ছিল বদ প্রকৃতির, শুধুই ওকে পেটাত। মারত ওর মাকেও। সবই সহ্য করত ও তবে সইতে পারল না ওর অসুখি মা টা। হঠাৎ একদিন মরেও গেল। সৎ বাপ তাড়িয়ে দিল ওকে। আর তারপর থেকেই ও ভেসে বেড়াচ্ছে রাস্তা আর রাস্তা, আর ফুটপাতের এখানে ওখানে। যেন আজীবনকালের এই ভেসে বেড়ানো। প্রায়ই ও নিজে ভেবে অবাক হয় এতো লাথিগুঁতো খেয়েও কিভাবে এখনো বেঁচে আছে। এভাবে সত্যি কি মানুষ বাঁচে?
জবাব খুঁজতে খুঁজতে উঠে দাঁড়ায় রাজু। বস্তাটা আবার কাঁধে নিয়ে নেমে পড়ে রাস্তায়। আবারো দিক, ঠিকানাহীন রাস্তায় গমগমে রোদে হাঁটা শুরু করে রাজু। মাথাটা ঝিমঝিম করে বারবার। পেটটা মোচড় দিয়ে ওঠে। হটাৎ দু এক টুকরো কাগজের সন্ধান পেলে সেটাকে আলাদিনের চেরাগ বলে মনে হয় ওর কাছে। আর সেটাকে জোর হাতে বস্তাবন্দী করে হাঁটতে থাকে। খেয়ালই করেনা কখন ওর চোখ দুটো বেয়ে তপ্ত জলের ধারা গলা পর্যন্ত বেয়ে পড়ে। হাঁটতে হাঁটতে কাঁদে রাজু। ওর আশেপাশে বিবেকহীন মানুষদের গলা ফাটা মিছিল। লক্ষ লক্ষ টোকাইয়ের বাংলাদেশে রাজুর ব্যক্তিগত অশ্রুপাতে কারই বা কি এসে যায়।