মতি ভাই বললেন কোটটা খুব সুন্দর
- 06 Nov 2025
- 44
মতিউর রহমান। এক কিংবদন্তির নাম। বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর সম্পাদক এবং প্রকাশক মতিউর রহমান। সবার প্রিয় মতি ভাই। তিনি একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং লেখক। তিনি এমন একজন মানুষ যাকে বিশ্লেষণ করে শেষ করা যাবেনা।
সাংবাদিকগণ তাকে পথিকৃৎ মনে করেন। বাংলাদেশে সাংবাদিকতা পেশায় যারা আছেন তাদের সবাই দেশের এক নম্বর সংবাদপত্র প্রথম আলোতে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেন সম্পাদক মতিউর রহমানের সাথে কাজ করতে, নিজেকে সমৃদ্ধ করতে। যারা সুযোগ পেয়েছেন তারা নিজেদের সৌভাগ্যবান বলে দাবী করেন। এ দেশের সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত প্রত্যেকে মনে করেন মতিউর রহমান শুধু একজন সমৃদ্ধ সম্পাদকই নন বরং তিনি একটি ইন্সটিটিউট। এই ইন্সটিটিউট থেকে তৈরি হয়েছে দেশের প্রথিতযশা অনেক সাংবাদিক। সবাই তাকে মতি ভাই বলেই সম্বোধন করেন।
মতি ভাই সবার সাথে হ্যান্ডশেক করলেন। এখনো শক্তপোক্ত হাত দিয়ে আমার হাত ধরে রাখলেন বেশ সময়। পিঠে হাত দিয়ে চাপড়ালেন আলতোভাবে। আরও দর্শনার্থী অপেক্ষারত দেখে আমরা বিদায় নিতে চাইলেও মতি ভাই আগের মতও হাত ধরে রাখলেন। আমার গায়ের কোটে হাত দিয়ে বললেন – “ কোটটা তো সুন্দর”! আমি বললাম – ধন্যবাদ স্যার।
শত ব্যস্ততার মধ্যে থেকেও মতি ভাইয়ের গল্প করার গুণ আশেপাশের মানুষদের মুগ্ধ করে। পাশাপাশি তার নেতৃত্বগুণ অসাধারণ। জেনেছি মতি ভাইয়ের জন্ম কলকাতায়, ১৯৪৬ সালের ২রা জানুয়ারি। নওয়াবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৬১ সালে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে এইচএসসি পাশ করেন।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন পরিসংখ্যান বিভাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মতিউর রহমান ১৯৬৬ সালে স্নাতক এবং ১৯৬৭ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। তিনি ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সাপ্তাহিক একতা”র সম্পাদক ছিলেন। এরপর ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ভোরের কাগজ পত্রিকায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর ১৯৯৮ সাল থেকে আজ অবধি তিনি প্রথম আলোর ।
আমার কর্মক্ষেত্র বাংলাদেশের স্বনামধন্য টেক জায়ান্ট ওয়ালটনের মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগে পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে দেশের সকল মিডিয়া হাউজগুলোর সাথে কাজ করতে হয়। বিশেষ করে সংবাদপত্র এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিয়ে আমার কাজ। এককথায় বললে পাবলিক রিলেশন। পাশাপাশি স্পোর্টস মার্কেটিং অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করছি। পাবলিক রিলেশন সংক্রান্ত কাজের সুবাদে প্রথম আলোর সাথে আমার সম্পর্ক বা যোগাযোগ প্রায় পনের বছর। বিশেষ করে প্রথম আলোর অনলাইনের শুরুর দিন থেকে আমার যোগাযোগ।
প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ৪ঠা নভেম্বর। ছাব্বিশ পেরিয়ে সাতাশ বছরে পদার্পণ করেছে প্রথম আলো। প্রতিবছরই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনটিতে প্রথম আলোর অফিসে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাই। গতকালও প্রথম আলোর অফিসে গিয়ে ২৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানালাম। আগেই আমরা শিডিউল নিয়ে রেখেছিলাম। প্রথম আলোর বিজ্ঞাপন বিভাগের আমাদের প্রিয় তারেক ভাই জানিয়েছিলেন মতি ভাই বিকাল পাঁচটা থেকে থাকবেন।
আমরা সময়মত যাই। তবে বেশি ভিড় থাকায় ডিজিটালের চীফ বিজনেস অফিসার জাবেদ সুলতান পিয়াস ভাইয়ের কক্ষে আড্ডায় মাটির হাড়ির মিষ্টি খেয়ে সবাই সময় পার করেছি। মাটির হাড়িতে মিষ্টির গল্পও শুনলাম আমরা পিয়াস ভাইয়ের মুখে। প্রতিবছর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে চ্যানেল আই থেকে কয়েক মণ মিষ্টি পাঠায় প্রথম আলোতে। আর মতি ভাই বছরে একবার রাত বারোটায় চ্যানেল আইয়ের একটি বিশেষ টকশো তে আলোচনা করেন।
সারাবছর অন্যকোন মিডিয়ায় আর যাওয়া হয়না মতি ভাইয়ের। মিনিট বিশেক পর আমাদের ডাক পড়লে আমরা মতি ভাইয়ের সাক্ষাৎ লাভ ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে যাই। ওয়ালটন থেকে আমরা তিনজন গিয়েছিলাম। চীফ মার্কেটিং অফিসার (সিএমও) জোহেব আহমেদ, এডিশনাল অপারেটিভ ডিরেক্টর অগাস্টিন সুজন আর আমি। আমরা ফুল নিয়ে কাছাকাছি যেতেই সহাস্যে মতি ভাই বললেন এই যে ওয়ালটন এসে গেছে। অনেক ভিড় আর ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি দারুণ প্রাণবন্ত। একগাল হেসে শুভেচ্ছা গ্রহণ করলেন। একই রকম হাসিমুখ থাকে তার যেমনটা অন্যান্য সময় দেখা যায়। আমাদের সাথে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন। আমরা মতি ভাইয়ের সাথে ক্যামেরায় ছবির জন্য পোজ দিলাম। ক্লিক ক্লিক। আমাদের নিজেদের মোবাইল ক্যামেরায়ও কয়েকটি ছবি তুলিয়ে নিলাম।
মতি ভাই সবার সাথে হ্যান্ডশেক করলেন। এখনো শক্তপোক্ত হাত দিয়ে আমার হাত ধরে রাখলেন বেশ সময়। পিঠে হাত দিয়ে চাপড়ালেন আলতোভাবে। আরও দর্শনার্থী অপেক্ষারত দেখে আমরা বিদায় নিতে চাইলেও মতি ভাই আগের মতও হাত ধরে রাখলেন। আমার গায়ের কোটে হাত দিয়ে বললেন – “ কোটটা তো সুন্দর”! আমি বললাম – ধন্যবাদ স্যার।
এখনো বয়স তার কাছে কোন ব্যাপার না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তিনি শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন সবার সাথে। তারও আগে সারাদেশ এমনকি দেশের বাইরে থেকে আসা প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের সাথে কয়েক ঘণ্টা মিটিং করেছেন। এই হলেন প্রাণোচ্ছলে ভরপুর মতিউর রহমান।