
স্বপ্নের জীবন
- 21 Jul 2025
- 44
রবিউল মিলটন
রাতের সান্নিধ্য থেকে ছিঁড়ে বের হল সুন্দর চেহারার সকাল। পূবের আকাশকে মনে হচ্ছে কে যেন সিঁদুরের বড় একটা টিপ পরিয়ে দিয়েছে। জানালার পাশ দিয়ে আসছে পাখিদের মিষ্টি গানের সুর। ছোট সাহেব ছোট সাহেব......আদুরে ডাক শুনে ঘুম ভাঙ্গে রাজুর। কম্বলের সুন্দর মুহূর্ত ছেড়ে বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয় রাজু। অতপর বিশাল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পোশাক পড়ে বসে যায় নাস্তার টেবিলে। পাউরুটি, মাখন, ডিম সেদ্ধ, দুধ, কলা নাশ্তা সেরে গাড়িতে চড়ে স্কুলে। বাসায় ফিরতে ফিরতে দুপুর। পোশাক ছেড়ে শাওয়ার।
তারপর খাবার টেবিল। রাইস, চিকেন ফ্রাই, ফিস ফ্রাই, ভেজিটেবল, ইত্যাদি। দুপুরে রেস্ট, তারপর বিকাল বেলা খেলার মাঠ। বন্ধুরা মিলে ক্রিকেট খেলে সন্ধ্যা বেলা বাসায় ফিরে নাস্তা সেরে পড়ার টেবিল। পড়া শেষে রাতের খাবার। অতঃপর কম্পিউটরে গেইম খেলা শেষে মায়ের হাত থেকে দুধের গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে গিলে ফেলা। আহ, চুমুকেই তৃপ্তি। বিছানার পাশে মা বসে আদুরে হাতে মাথায় হাত বুলাতে থাকে। সমস্ত চোখে ঘুম বাসা বাঁধতে থাকে। ঘুমের মধ্যে রাজু হারিয়ে যায় স্বপ্নের রাজ্যে। হঠাৎ ডান পাশে পেটের কাছে বুটের লাথি। ঘুম ভেঙ্গে যায়। আর রাজুর স্বপ্নের রাজ্য......, বস্তার মধ্যে থেকে কচ্ছপের মত মাথা বের করে পিটপিট করে তাকায় রাজু। ঘুম ঘুম চোখে দেখে নির্দয় একটি মুখ।
ওই হালার পো, অহনো হুইয়া রইছস। এইডা কি তোর বাপের সরাইখানা? যাহ, দূরে গিয়া মর। রুক্ষ কণ্ঠে মার্কেটের দারোয়ান চেঁচিয়ে ওঠে। ফুটপাথের বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় রাজু। বস্তাটা কাঁধে নিয়ে হাঁটা শুরু করে। চোখ জুড়ে রয়ে যায় স্বপ্নের রেশ। আর মনের অজান্তে ভেসে ওঠে মৃত মায়ের মুখ। কালো মেঘে ছেয়ে যায় মন। চোখ দুটো বেয়ে জলের ধারা নেমে ঠোঁট দুটোকে স্পর্শ করে। নোনা স্বাদ অনুভুত হতে বুকের মধ্যে খা খা করে ওঠে। হায়রে জীবন!